আমার নাম সিয়াম । আমার বয়স ২৬ বছর । আমি ঢাকা শহরের একটি স্বনামধন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইনচার্জ পদে কর্মরত আছি । আমি মোটামুটি প্রায় ৩৮ হাজার টাকার মতো বেতন পায় । আমি ঢাকা শহরে একাই একটি বাসাতে থাকি আমি এখন অবিবাহিত । বাড়িতে আমার বাবা-মা ও ছোট এক বোন রয়েছে ।
আমি যেহেতু অবিবাহিত ব্যাচেলার আমার কোন প্রেমিকা ছিল না যার কারণে আমি মাঝে মাঝেই ঢাকা শহরের একটা আবাসিক হোটেলে যেতাম কিছু সময় কাটানোর জন্য । সেখানে যাওয়ার পর আমার একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখে নজর আটকে যায় । আমি সেই মেয়েটিকে এক পলক দেখে ফিদা হয়ে যায় হোক সে মেয়েটা আবাসিক হোটেলের পতিতা তারপরও আমি তার প্রেমে পড়ে যাই । মেয়েটির নাম ছিল রূপালী তার বয়স ছিল ২২ বছর ।
আমি আগে যেখানে মাসে একবার যেতাম এখন সেখানে আমি প্রতি সপ্তাহে একবার যাই শুধুমাত্র সেই মেয়েটির কাছে । টাকা বেশি লাগলেও আমি সেই মেয়েটিকেই বেছে নি এবং তার সাথে সময় কাটায় । মেয়েটির প্রতি আমি এতটাই দুর্বল হয়ে গেলাম যে এখন প্রতি দুইদিন পরপর তার কাছে না গেলে আমি অশান্তিতে ভোগী মনে শান্তি পাই না । আমার এখন এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে তার কাছে প্রতিদিন না গেলে আমার রাতে ঘুম হয় না আমি যা বেতন পায় তা আমার সব শেষ হয়ে যায় বরং আমি আরো ধার দেনায় পড়ে যাই ।
আমার এমন পরিস্থিতি দেখে আমার খুব কাছের একজন বন্ধু বলল যে দেখ বন্ধু তুই তো ওই পতিতা মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেছিস দুর্বল হয়ে গেছিস । তুই এখন প্রতিদিন তার কাছে যাচ্ছিস এতে করে তোর কিন্তু অনেক টাকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । এর থেকে তুই যদি একটা কাজ করিস যেহেতু তুই ওই মেয়েটির প্রেমে পড়েছিস ভালবাসিস । তাহলে মেয়েটির সাথে কথা বলে বুঝিয়ে বলে দেখ যে আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি আমি তো তোমার কাছে প্রতিদিন আসি । আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই তোমাকে নিয়ে সুখের সংসার করতে চাই । তোমাকে এই পাপের দুনিয়া থেকে মুক্ত করে আমার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেয়ে শান্তিতে বসবাস করবো ।
ছেলেটির এমন কথা শুনে মেয়েটি ভেবে দেখল যে এই ছেলেটি দীর্ঘ ৪-৫ মাস যাবত প্রতিদিন তার কাছে আসতেছে এবং এত এত টাকা খরচ করছে মনে হয় সত্যি ছেলেটা আমাকে ভালোবাসে আমাকে বিয়ে করে সংসার করতে চায় । যার কারণে ওই সুন্দরী পতিতা মেয়েটি ছেলেটির কথাই রাজি হয়ে যায় এবং তার সাথে বিয়ে করতে মত প্রদান করে ।
মেয়েটির কাছ থেকে হা সূচক কথা শুনে আমি খুব খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় এবং পরের দিনে মেয়েটিকে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করি । তারপর মেয়েটিকে নিয়ে আমি শহরে ফ্যামিলির রুম ভাড়া নিয়ে সংসার করতে থাকি । এদিকে আমি মনে করেছিল যে আমার বউ একজন পতিতা এটা তো আর গ্রামের মানুষ কেউ জানে না । আমি ঈদের পূজার ছুটিতে মাঝে মাঝে বউকে নিয়ে গ্রামে বেড়াতে যাব কোন সমস্যা হবে না কেউ চিনবে না কেউ জানবে না । কেউ কখনো জানতে পারবেনা বুঝতে পারবে না যে আমার বউ একজন পতিতা ছিল অতীতে ।
এভাবে দীর্ঘ এক বছর রূপালীকে নিয়ে আমার সুখের সংসার চলছিল । এক বছর পর কোরবানির ঈদে আমি তার বউকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায় ।গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পরে বউকে নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয় । আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলে যখন আমার বউকে দেখলো সে সাথে সাথে চিনতে পারল যে এই মেয়েটির সাথে সে ঢাকা শহরের আবাসিক হোটেলে সময় কাটিয়েছিল । তখন সাথে সাথে চেয়ারম্যানের ছেলেটা বলে উঠলো কিরে সিয়াম তুই শেষ পর্যন্ত ঢাকা শহরের আবাসিক হোটেলের পতিতা মেয়েকে বিয়ে করেছিস তুই তো আমাদের গ্রামের মান সম্মান নষ্ট করে দিলি রে ।
চেয়ারম্যানের ছেলের মুখে এমন কথা শোনে আমি অবাক হয়ে গেল আতঙ্কিত হয়ে গেল যে । এটা কিভাবে সম্ভব এখন তো আমার মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে যাবে চেয়ারম্যানের ছেলে তো সবাইকে বলে দেবে । আমি যেটা মনে মনে ভেবেছিল সেটাই ঘটলো চেয়ারম্যানের ওই ছেলেটা সারা এলাকায় ছড়িয়ে দিল যে সিয়াম ঢাকা শহরের আবাসিক হোটেলের পতিতা একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে ।
যেই বউটাকে আমার বাবা-মা এতদিন খুব ভালোবাসতো এই কথা শোনার পর থেকে আমার বাবা-মা আর বউয়ের সাথে কথা বলছে না । এলাকায় সবাই যেন বাঁকা চোখে তাকানো শুরু করলো এবং আমার বউকে নিয়ে সমালোচনা শুরু করলো । আমার বাবা-মায়ের এবং আমাদের এলাকার মানুষদের এমন ব্যবহার দেখে আমিও কেমন যেন একটা হয়ে গেলাম দ্বিধায় পড়ে গেলাম চিন্তায় পড়ে গেলাম যে এখন আমার কি করা উচিত ।
আমার বাবা-মা একটা সময় আমাকে রুমে ডেকে বলল বাবা তুই যে কাজটা করেছিস ভালো করিস নি আমরা একটা সমাজে বসবাস করি ।একটা আবাসিক হোটেলের পতিতা মেয়েকে আমাদের বাড়ির বউ আমরা মেনে নিতে পারব না এই সমাজ কেউ মেনে নিতে পারবে না তুই মেয়েটিকে ডিভোর্স দিয়ে দে । বাবা মায়ের কাছ থেকে এমন কথা শুনে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি এখন কি করবো এই বউকে নিয়ে সংসার করলে তো মান সম্মানের কিছুই থাকবে না মানুষ আমার পরিবারকে নিয়ে হাসবে সমালোচনা করবে ।
আর এমন পরিস্থিতিতে আমিও এমন বউকে নিয়ে সুখের সংসার করতে পারবো না তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি রূপালীকে ডিভোর্স দিয়ে দিব । যখন আমি রুপালীর কাছে গিয়ে বললাম যে দেখো আমি যে চিন্তা ভাবনা করেছিলাম সবকিছুই তো উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে শুধুমাত্র ওই চেয়ারম্যানের ছেলেটার কারণে । এখন তোমাকে আমার পরিবারও মেনে নেবে না আমাদের সমাজে মেনে নেবে না যার কারণে আমিও তোমাকে আর মেনে নিতে পারছি না ।
তখন রুপালি আমাকে বলল দেখো তুমি আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে পাপের জীবন থেকে ফিরিয়ে এনে বিয়ে করেছ নতুন জীবন দিয়েছো ।এখন আমার তো যাওয়ার কোন জায়গা নেই আমার তো এই দুনিয়াতে কেউ নেই এখন তাহলে আমি কোথায় যাব ।
তখন আমি তাকে বললাম দেখো রূপালী তুমি কোথায় যাবে কি করবে এটা তোমার বিষয় তবে আমি তোমার সাথে আর থাকতে পারছি না তোমাকে আমি আর মেনে নিতে পারবো না ।আমাকে আমার বাবা-মা এবং পরিবারকে গুরুত্ব দিতে হবে তোমার কারনে আমি আমার বাবা-মায়ের পরিবারে মান সম্মান হারাতে পারবো না ।
আমি রুপালি কে নিয়ে ঢাকা শহরে চলে আসলাম এবং কাজী অফিসে গিয়ে রূপালীকে ডিভোর্স দিয়ে দিলাম ।এরপরে আর রূপালির সাথে আমি আর যোগাযোগ করেনি ।তবে অনেকদিন পর জানতে পারলাম যে রুপালি আবারো সেই আবাসিক হোটেলে আছে সেখানে কাজ করছে ।
প্রিয় বন্ধুরা এই ঘটনায় সিয়াম যে কাজটা করেছে রূপালীর সাথে এটা কি আসলেই ঠিক হয়েছে নাকি সিয়ামের অন্যায় হয়েছে ।অবশ্যই সবাই মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন ।
এই ঘটনা থেকে কিন্তু আমাদের অনেক কিছু শেখা রয়েছে আমরা যখন কোন বিশেষ মুহূর্তে বিশেষ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তখন কিন্তু আমাদের উচিত এই ঘটনার ভবিষ্যৎ কি হতে পারে ভবিষ্যতে পরিণাম কি ঘটবে এই বিষয়গুলো ভেবে কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ।হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ভুল কাজ করা কখনো ঠিক না কারো জীবন নষ্ট করা কাউকে স্বপ্ন দেখিয়ে মাঝপথে এসে ছেড়ে দেওয়া কখনোই ঠিক নয় ।
0 Comments